হজ ফরজ হওয়ার শর্ত
হজ ফরজ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে। এক. মুসলিম হওয়া। দুই.  বিবেকবান হওয়া, পাগল না হওয়া। তিন. বালেগ হওয়া, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। চার. আজাদ বা স্বাধীন হওয়া—অর্থাৎ কারো গোলাম বা দাস না হওয়া। পাঁচ. দৈহিক ও আরথিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া।

হজ ফরজ কার ওপর
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও মক্কায় গিয়ে হজকার্য সম্পন্ন করে ফিরে আসার সামর্থ্য রাখে, এমন প্রত্যেক মুসলমান নারী-পুরুষের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। তবে নারীদের জন্য স্বামী বা মাহরাম পুরুষ সঙ্গে থাকা শর্ত। (ফাতাওয়া শামি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪৫৫)

মাহরাম: যাদের সঙ্গে কখনো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায় না, তারাই মাহরাম। যেমন—পিতা, পুত্র, আপন ও সত্ভাই, দাদা-নানা, আপন চাচা ও মামা, ছেলে বা নাতি, জামাতা, শ্বশুর, দুধভাই, দুধ ছেলে প্রমুখ। তবে একা একা দুধভাইয়ের সঙ্গে এবং যুবতি শাশুড়ির জামাতার সঙ্গে যাওয়া নিষেধ। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪৬৪)

হজ ফরজ হয়েছে কিনা জানবেন যেভাবে
হজ ও জাকাতের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। তাই কারো ওপর জাকাত ফরজ না হয়েও তার ওপর হজ ফরজ হতে পারে। হজ ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য হলো, জাকাতের সম্পর্ক নির্ধারিত নিসাবের সঙ্গে। হজের সম্পর্ক মক্কায় আসা-যাওয়ার খরচের সঙ্গে। সুতরাং স্থাবর সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রয় করে কেউ যদি হজ আদায় করতে সক্ষম হয় এবং হজ থেকে ফিরে এসে বাকি সম্পত্তি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, তাহলে তার ওপর হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৫২; আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ৫১৬)

একইভাবে ব্যবসায়ীর দোকানে যে পরিমাণ পণ্য আছে, তার কিছু অংশ বিক্রয় করলে যদি হজ করা সম্ভব হয় এবং ফিরে এসে যদি বাকি পণ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা যায়, তাহলে তার ওপরও হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৫৩)

নিজের হজ আগে, পরে অন্যের হজ
মনে রাখতে হবে যে আগে নিজের হজ আদায় করবে। পরে মাতা-পিতার চিন্তা করবে। সামর্থ্য থাকলে তাঁদের নিয়ে একসঙ্গে হজ করবে। অন্যথায় আগে নিজের ফরজ আদায় করবে। (রহিমিয়া, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ২৮২)

অনেকে মনে করে সন্তানের বিয়ে আগে দিতে হয়। তারপর হজ আদায় করতে হয়। অথচ এ কথা ইসলামসমর্থিত নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তানের বিয়েও খুবই জরুরি। তাই বলে সন্তানের বিয়ের জন্য হজে বিলম্ব করা যাবে না। (রহিমিয়া, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ২৭৬)

হজ ফরজ হওয়ার পর করণীয়
হজ যে বছর ফরজ হয়, ওই বছরই আদায় করে নেওয়া উচিত। অহেতুক কারণে বিলম্ব করা গুনাহ। একবার হজ ফরজ হলে তা আর কখনো মাফ হয় না। (আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ৫২৮) মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজের ইচ্ছা করে, সে যেন তা দ্রুত আদায় করে নেয়। কেননা মানুষ কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ে, কখনো সম্পদ খরচ হয়ে যায়, কখনো সমস্যার সম্মুখীন হয়। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস, নং: ২০৭)

হজে যাওয়ার আগে মানুষের অধিকার
হজে যাওয়ার প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর করণীয় হলো, মানুষের অধিকারের প্রতি যত্নবান হওয়া। ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করা। ইবাদতে কোনো ত্রুটি থাকলে তা শুধরে নেওয়া। তাওবা-ইস্তিগফার করা। এমন সফরসঙ্গী নির্বাচন করা, যিনি নেককার ও সহযোগিতাকারী। বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির করা। হজের মাসআলা-মাসায়েল শেখা। (ফাতাওয়া আলমগিরি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২২০)

নিয়ত হতে হবে বিশুদ্ধ
হজে যাওয়ার সময় নিয়ত বিশুদ্ধ করে নিতে হবে। মহান আল্লাহর হুকুম পালনার্থে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হজ করছি—এমন নিয়ত করতে হবে। লোকে হাজি বলবে, সম্মান দেখাবে, প্রসিদ্ধি অর্জন হবে, ব্যবসা ভালো জমবে, নির্বাচনে ভালো করা যাবে—এ ধরনের মনোভাব নিয়ে হজ করলে সাওয়াব তো হবেই না; বরং লৌকিকতার কারণে গুনাহ হবে। (মুসলিম, হাদিস নং: ১৯০৫)

যাবতীয় খরচ হালাল হতে হবে
হজের সার্বিক কাজে যেসব টাকা খরচ করা হবে, তা হালাল হতে হবে। হজের মধ্যে হারাম টাকা খরচ করাও হারাম। যে হজে হারাম টাকা খরচ করা হয়, সে হজ কবুল হয় না। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৫১৯)