You are currently viewing জান্নাতুল বাকী

জান্নাতুল বাকী

মদীনার ঐতিহাসিক জান্নাতুল বাকী :

মদিনায় মসজিদএ নববীর পাশে জান্নাতূল বাকী । আসল নাম গারকাতুল বাকী অথবা বাকী কবরস্থান। জান্নাতুল বাকি নামে সুপরিচিত । এটি মদিনা মোনাওয়ারায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক কবরস্থান। যেটাকে আরবীতে বলা হয়- বাকিউল গারকাদ। যা হালে মদিনাবাসীর কাছে বাকি কবরস্থান নামে পরিচিত। জান্নাতুল বাকি মসজিদে নববীর পূর্ব দিকে অবস্থিত। মদিনা নগরীতে মসজিদে নববী সংলগ্ন কবরস্থানের নাম জান্নাতুল বাকী। এখানে মুহাম্মদ (সা:)-এর সন্তান ও স্ত্রীদের কবর রয়েছে। ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান (রা:)-এর কবর পর্যন্ত জান্নাতুল বাকীর সীমানা বিস্তৃত।

মুহাম্মদ (সা) হিজরত করে মদিনা আসার সময় জান্নাতুল বাকির স্থান সবুজ বৃক্ষে আচ্ছাদিত ছিল। মসজিদে নববী নির্মাণের সময় তিনি মসজিদের স্থানটি দুজন এতিম শিশুর কাছ থেকে কিনে নেন। তার এক সাহাবি আসাদ বিন জারারার মৃত্যুর পর মুহাম্মদ (সা) কবরস্থানের জায়গা নির্ধারণ করেন। আসাদ বিন জারার ছিলেন এখানে দাফন হওয়া প্রথম আনসার ব্যক্তি। উসমান বিন মাজঊন এখানে দাফন হওয়া প্রথম মুহাজির ব্যক্তি।

তৃতীয় খলিফা উসমান ইবনে আফফানের মৃত্যুর পর তাকে এখানে দাফন করা হয়। তখন তার কবরটি পার্শ্ববর্তী ইহুদি কবরস্থানের মধ্যে পড়ে। খলিফা প্রথম মুয়াবিয়া তার সম্মানে এই স্থানকে জান্নাতুল বাকির অংশ করে নেন। উমাইয়া খিলাফতের সময় তার কবরের উপর প্রথম গম্বুজ নির্মিত হয়। অন্যান্য সময়েও এখানকার বিভিন্ন কবরের উপর গম্বুজ ও স্থাপনা নির্মিত হয়েছে।

ইমাম মালিক (রহ.)-এর কথামতে জান্নাতুল বাকিতে প্রায় দশ হাজার সাহাবার কবর রয়েছে। কিন্তু কোনো কবর চিহ্নিত নেই। জান্নাতুল বাকিতে নবী করিম (সা.)-এর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য থেকে শুরু করে, সাহাবা, পীর-আউলিয়া, গাওস-কুতুব, বুজুর্গ এবং প্রচুর মুসলমানের কবর বিদ্যমান।

এই কবরস্থানের গোড়াপত্তন ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রায়ই শেষ রাতে জান্নাতুল বাকিতে যেতেন এবং দোয়া করতেন। দোয়ায় নবী করিম (সা.) বাকি কবরবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। হাদিসে আছে, হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শেষ রাতে বাকির দিকে বেরিয়ে যেতেন এবং বলতেন, ‘হে (কবরের) মুমিন সম্প্রদায়! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের নিকট এসেছে যা তোমাদেরকে ওয়াদা দেওয়া হয়েছিল, কাল কিয়ামত পর্যন্ত তোমরা অবশিষ্ট থাকবে এবং ইনশাআল্লাহ নিশ্চয়ই আমরাও তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো। হে আল্লাহ! তুমি বাকিউল গারদবাসীদের ক্ষমা করে দাও।’ –সহিহ মুসলিম

কবর জিয়ারত করা প্রত্যেক স্থানেই শরিয়তসম্মত। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কবর জিয়ারত করো, কেননা তা তোমাদের মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেবে।’ –সহিহ মুসলিম

জান্নাতুল বাকিতে যাদের কবর রয়েছেঃ

তন্মধ্যে- নবী কন্যা হজরত ফাতেমা (রা.), ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.), উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.), নবীর চাচা হজরত আব্বাস (রা.), নবী পুত্র হজরত ইবরাহিম (রা.), নবী দৌহিত্র হজরত হাসান (রা.), হজরত উসমান ইবনে মজউন (রা.), নবী কন্যা হজরত রোকাইয়া (রা.), ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.), বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.), হজরত সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), নবীর দুধমা হজরত হালিমা সাদিয়া (রা.) প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

মদিনায় অবস্থানরত হজপালনকারীদের মৃত্যু হলে এই কবরস্থানে দাফন করা হয়। সেই সঙ্গে মদিনাবাসী এখানে দাফনের সুযোগ পান। এখনও প্রতিদিন এখানে লাশ দাফন করা হয়। তবে বাকি কবরস্থানের শুরুর অংশে এখন আর নতুন করে কাউকে কবর দেওয়া হয় না। কারণ এসব অংশেই রয়েছে সাহাবাদের কবর।

জান্নাতুল বাকী জিয়ারতের জন্য ফজর ও আসরের নামাজের পর খুলে দেওয়া হয়। তখন শুধু পুরুষরা জিয়ারতের জন্য ভেতরে যেতে পারেন। কারণ, নারীদের জন্য ইসলামি শরিয়তে কবর জেয়ারত করা বৈধ নয়।

ইসলামি স্কলারদের মতে, জান্নাতুল বাকিতে সমাহিতদের প্রতি সালাম দেওয়ার সুন্নত পদ্ধতি হলো- অনির্দিষ্টভাবে সবাইকে একসঙ্গে সালাম দেওয়া ও তাদের জন্য দোয়া করা।

ওসমানি খেলাফতের সময় এবং এরও আগে জান্নাতুল বাকিতে অবস্থিত সাহাবিদের কবরের উপর নানা ধরনের স্থাপনা ছিল। পরে কবরকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের কুসংস্কার চালু হয়। পরবর্তীতে সৌদি আরব সরকার এসব স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়। বর্তমানে জান্নাতুল বাকির কোনো কবরে নামফলক নেই, কোনটা কার কবর তাও নির্দিষ্ট করা নেই।

তারপরও মদিনার বয়স্ক ও অনুসন্ধানীদের কাছে জিজ্ঞেস করলে দু’একটি কবরের কথা তারা বলতে পারেন। যেমন, জান্নাতুল বাকিতে প্রবেশের মুখে আলাদা করে ঘেরাও করে রাখা কবর দু’টো। এই দুই কবরের একটি হজরত ফাতেমা (রা.)-এর, অপরটি হজরত আয়েশা (রা.) এর। আর বাকি কবরস্থানের একেবারে শেষ মাথায় রয়েছে ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.)-এর কবর।

জান্নাতুল বাকিতে কবর হলেই, তার জন্য বেহেশত ওয়াজিব, কিংবা এখান থেকে কাল কিয়ামতের দিন সত্তর হাজারের একটি দল পুনরুত্থিত হবে; যারা বিনা হিসেবে বেহেশতে যাবে। এমন কথার ভিত্তি ইসলামে নেই। বস্তুত প্রত্যেককে তার আমল অনুযায়ী প্রতিদান দেওয়া হবে।