উমরার ফরয দুটি

১। উমরার ইহরাম করা। অর্থাৎ উমরার নিয়তে তালবিয়া পাঠ করা।

২। বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করা ।

উমরার ওয়াজিব দুটি

১। সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করা।

২। মাথার চুল মুণ্ডানো বা কটা।

উমারা আদায়ের পদ্ধতি হল, মীকাত থেকে শুধু উমরার ইহরাম করবে। এরপর মক্কা পৌঁছে বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করবে। অতপর সাফা-মারওয়ার সায়ী করবে। তারপর মাথার চুল মুণ্ডিয়ে বা ছোট করে হালাল হয়ে যাবে।

মাসআলা : উমরার তাওয়াফ ও যে তাওয়াফের পর সায়ী আছে সেই তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল  করা অর্থাৎ বীরদর্পে কাঁধ দুলিয়ে কিছুটা দ্রুত বেগে চলা সুন্নত। তদ্রƒপ পুরো তাওয়াফে ইজতিবা করা (পরিধেয় চাদর ডান বগলের নীচে দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর রাখা) সুন্নত। তবে এ দু’টি বিষয়-রমল ও ইজতিবা শুধু পুরুষের জন্য সুন্নত। -মানাসিক ১২৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৫

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, হজ্ব ও উমরায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাওয়াফ করতেন তখন প্রথম তিন চক্করে রমল করতেন। বাকি চার চক্করে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেন। এরপর দু’ রাকাত নামায পড়তেন। এরপর সাফা-মারওয়া মাঝে সায়ী করতেন। -সহীহ মুসলিম ১/৪১০

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, জিঈররানা নামক স্থান থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ উমরা করেছেন। তাঁরা তাওয়াফকালে ‘রমল’ করেছেন এবং পরিধেয় চাদর (ডান কাঁধ খালি রেখে) বগলের নিচ দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর রেখেছেন। -সুনানে আবু দাউদ ১/২৫৭; মুসনাদে দারেমী, হাদীস ১৯৭৪; জামে তিরমিযী ১/১৭৪

মাসআলা : মহিলাদের জন্য রমল নেই।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মহিলাদের জন্য ‘রমল’ করার বিধান নেই। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩১১১

মাসআলা : সকল তাওয়াফের পর দুই রাকাত নফল নামায পড়া ওয়াজিব। তাওয়াফ নফল হোক বা ফরয। আর এই দুই রাকাত নামায মাকামে ইবরাহীমের পিছনে পড়া মুস্তাহাব।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় এলেন তখন বাইতুল্লাহর চারপাশে সাত বার তাওয়াফ করলেন। তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দু’ রাকাত নামায পড়লেন। এরপর সাফা-মারওয়ার দিকে গেলেন।… -সহীহ বুখারী ১/২২০

মাসআলা : মাকামে ইবরাহীমের পিছনে পড়া সম্ভব না হলে মসজিদে হারামের যে কোনো স্থানে এই দুই রাকাত নামায পড়া যাবে।

মাসআলা : তাওয়াফ পরবর্তী দুই রাকাত নামায তাওয়াফের পর অবিলম্বে আদায় করা উত্তম। বিনা ওজরে বিলম্বে পড়া মাকরূহ। তবে মাকরূহ ওয়াক্ত হলে পরে পড়বে। -রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৯, মানাসিক ১৫৫, গুনইয়াতুন নাসিক ১১৬

মাসআলা : একাধিক তাওয়াফ করে পরবর্তী দুই রাকাত নামাযকে একত্রে পড়া মাকরূহ।

নাফে‘ রাহ. থেকে বর্ণিত, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. একত্রে একাধিক তাওয়াফ করা অপছন্দ করতেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক সাত চক্করে (অর্থাৎ এক তাওয়াফের পর) দুই রাকাত নামায পড়া জরুরি। তিনি একত্রে দুই তাওয়াফ করতেন না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ৯০১২

মাসআলা : তাওয়াফের পরের সময় যদি মাকরূহ ওয়াক্ত হয়ে থাকে তবে মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর একাধিক তাওয়াফের নামায একত্রে আদায় করা যাবে। -গুনইয়াতুন নাসিক ১১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৭

আতা রাহ. বলেন, উমন রা, ফজরের পর তাওয়াফ করেন। অতপর সওয়ার হয়ে তুয়া নামক স্থানে এসে অবতরণ করেন। এরপর নামায পড়েন।… -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩৩২৬

হযরত মিছওয়ার ইবনে মাখরামা রা. ফজরের পর একত্রে তিন তাওয়াফ করতেন এবং সূর্যোদয়ের পর প্রত্যেক তাওয়াফের জন্য দুই রাকাত নামায আদায় করতেন। তিনি আসরের পরও অনুরূপ করতেন। অতপর সূর্যাস্তের পর প্রত্যেক তাওয়াফের জন্য দুই রাকাত নামায আদায় করতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৩৪২২

উমরার সায়ী

‘সাঈ’ হল, সাফা-মারওয়ার মাঝে সাত চক্কর দেওয়া। সাফা থেকে শুরু করে মারওয়াতে পৌঁছলেই এক চক্কর হবে। এরপর মারওয়া থেকে সাফাতে আসলে দ্বিতীয় চক্কর হবে। এভাবে সাফা-মারওয়ার মাঝে ৭ চক্কর পূর্ণ করতে হবে। সাঈর প্রথম চক্কর শুরু হবে সাফা থেকে আর সপ্তম চক্কর শেষ হবে মারওয়াতে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২১৮

মাসআলা : সাঈর সময় সবুজ দুই পিলারের মধ্যবর্তী স্থান পুরুষের জন্য মধ্যম গতিতে দৌড়ে অতিক্রম করা মুস্তাহাব। কিন্তু মহিলাগণ দৌড়াবেন না। স্বাভাবিকভাবে হাঁটবেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৬৪৪

মাসআলা : সাঈ সমাপ্ত করার পর মাথা মুণ্ডিয়ে বা চুল ছোট করে এহরাম মুক্ত হয়ে যাবেন। এ পর্যন্ত উমরার কাজ শেষ হল। তামাত্তু হজ্বকারীগণ এখন থেকে হজ্বের এহরাম বাধার আগ পর্যন্ত বৈধ সব কাজ করতে পারবেন। অবশ্য হারামের এলাকায় সাধারণভাবে নিষিদ্ধ কাজসমূহ যেমন, শিকার করা ইত্যাদি তখনও নিষিদ্ধই থাকবে।